রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

জনাব কেজরিওয়ালঃ ভারতের আগামী দিনের নায়ক !

ভারতের আম আদমি পার্টির আলোচিত নেতা জনাব অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই ৯ সচিবকে বদলী করার পাশাপাশি মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই দিল্লির নাগরিক সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজে বের করার নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

পত্রিকায় এই খবর পড়ে, রাজভাই অবাক হয়ে বললেন, জনাব কেজরিওয়াল দেখি প্রথমদিনই ‘নায়ক’ ছবির নায়কের মত ছক্কা মেরে দিলেন? 

আমি বললাম, কিভাবে?

রাজভাই বললেন, দেখেন, ভারতের মত একটা প্রায় আমলা শাসিত প্রশাসনে একযোগে এতজন ডাকসাইটে আমলাকে বদলী করতে গার্টস লাগে, আর সেটা জনাব কেজরিওয়াল প্রথমদিনই দেখাতে পেরেছেন। আমরা খাঁটি বাংলায় যাকে বলি, ‘বাসর রাতে বিড়াল মারা’-উনি সেটা মারতে পেরেছেন। সবচেয়ে বড় যে কাজটা উনি করতে পেরেছেন, সেটা হল, উনি ভারতের প্রশাসনযন্ত্রে একটা ম্যাসেজ দিতে সক্ষম হয়েছেন যে, ‘আগের মত আর চলবে না’। আর এটাই ওনাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দিয়েছে যা তার কাজকে ভবিষ্যতে অনেক সহজ করে দেবে।   

আমি বললাম, দেখা যাক! ভারতের আইন-কানুন গুলো এমনভাবে বিন্যস্ত যে, তাকে আমলাতন্ত্রের জালে জড়াতেই হবে। আর যদি সেটা উনি জড়াতে না চান তাহলে তাকে আইন ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হবে আঁচিরেই। আর পুরাতন রাজনৈতিক ঘাঘুরা এটার জন্যই ওনাকে সরকার গঠন করতে কিছুটা বাধ্য করেছেন।

রাজভাই বললেন, বুঝলাম না?

আমি বললাম, এই আম আদমি পার্টির বয়স কত? বড়জোর এক থেকে দেড় বছর? আর এই অল্প সময়ের মধ্যেই তারা এত জনপ্রিয় হয়ে গেল যে, দিল্লির মত একটা রাজ্যে তারা সরকার গঠনের মত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল? কিছু সংখ্যক আপাত রাজনৈতিকভাবে অপরিচিত তরুণের দল মানুষের মনে জায়গা করে নিল এত তাড়াতাড়ি? যা তাদের দিল্লীর মসনদের মত একটা প্রেস্টিজিয়াস আসনে আসীন করে দিল?

না, এর মূলে আছে দিল্লী তথা ভারতের প্রচলিত দলগুলির প্রতি মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, বঞ্চনা আর আহাকার যা তাদের বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করেছে। হ্যাঁ! তারা এইরকম বিকল্প অনেকদিন ধরেই খুঁজছিল কিন্তু তা তারা পাচ্ছিল না বলেই কখনো এইদল, কখনো ওইদলে ভোট দিয়ে বারবার সরকার পরিবর্তন করছিল আর প্রতিবার প্রতারিত হচ্ছিল। ঠিক, মানুষের এই দুর্বিষহ সময়েই আম আদমি দলের আবির্ভাব ও ভোটে জয়লাভ।

আপনি কি নেগেটিভ ভোটের কথা বলছেন? তাহলে কি জনাব কেজরিওয়াল ও তার দলের কোন ভাল কোন কাজ নেই যা মানুষের মনে আশা জাগিয়েছে? রাজভাই বললেন।

আমি বললাম, আছে-

প্রথমতঃ জনাব অরবিন্দ কেজরিওয়াল, একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি যিনি ভারতের আমলাতন্ত্রের শক্তিশালী মন্ত্রণালয় আয়কর দফতরের একজন অফিসার ছিলেন। মানুষের জন্য কিছু করবেন বলেই তিনি তার নিশ্চিত জীবন ছেড়ে জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন, বেছে নিয়েছিলেন এক অনিশ্চিত ভবঘুরে ও প্রতিবাদী জীবন। যা দিল্লির মানুষ অনেকদিন ধরেই চাক্ষুষ করছিলেন আর অবচেতন মনে নিজেরদেরকে তার সাথে তুলনা করে তাকে নায়ক রূপে তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিচ্ছিলেন। এছাড়াও তাকে মাঠে-ময়দানে জনাব আনা হাজারের সাথে অনশন করতে দেখে তার সততা আর কমিটমেন্টের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। মানুষ ভাবতে পেরেছেন যে, একে দিয়েই তাদের কাঙ্ক্ষিত সেই পরিবর্তনটা হবে। তাই প্রথম সুযোগেই তারা তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন অচলায়তন ভেঙ্গে পরিবর্তন আনার জন্য। আর সরকারে জয়েন করেই তার প্রথম আঘাতটাও হয়েছে একেবারে মোক্ষম, যেমনটা ভোটাররা চেয়েছিলেন।

দ্বিতীয়তঃ আম আদমি পার্টির সাথে যারা জড়িত বা যাদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তারা অধিকাংশই বয়সে তরুণ আর প্রতিবাদী। তারা ভারত তথা দিল্লির বিভিন্ন নাগরিক ও সামাজিক আন্দোলনের সাথে অনেকদিন ধরেই জড়িত ছিলেন এবং তাদের সততার বিষয়ে নাগরিকরা একেবারেই নিশ্চিত। তাই তাদের সকলকে এক জায়গায় একটা দলে দেখে মানুষ আশান্বিত হয়েছে, ভেবেছে- এরাই পারবে!     

তৃতীয়তঃ নির্বাচনে জনাব কেজরিওয়াল নিজের জন্য সেফ কোন আসন বেছে না নিয়ে টার্গেট করেছেন দিল্লীর কয়েকবারের মুখ্যমন্ত্রী, ভারতীয় কংগ্রেসের স্টার নেত্রী শ্রীমতি শিলা দীক্ষিতকে। শ্রীমতি দীক্ষিতকে পরাস্ত করেই তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করবেন; তার এই মনোভাব দিল্লীর মানুষকে লাইভ গ্ল্যাডিয়েটর মুভি দেখার আনন্দ দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ভোটারদের মননে এবং তাই তারা ভোট কেন্দ্রে যেয়ে যুদ্ধের আমেজে আম আদমিকে ভোট দিয়েছেন।  

চতুর্থঃ ঝাড়ু, ভারতীয় সমাজে প্রতিবাদী মানুষের শেষ হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত বা দুর্বলের অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত। অপরদিকে মেয়েরা এটাকে তাদের মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে মনে করে। আবার নিম্নবর্ণের হিন্দুদের তথা হরিজনদের কাছে এটা তাদের রুটি রুজির প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। আর এটাকে মার্কা হিসেবে বেছে নেওয়াতে একদিকে যেমন তা মানুষের মনে দ্রুত দাগ কেটেছে, অপরদিকে প্রচলিত মার্কা গুলিকে ঝেটিয়ে বিদায় করার মানসে, মানুষ ঝাড়ু মার্কায় ছাপ মেরে যুদ্ধ জয়ের নির্মল আনন্দ উপভোগ করেছে।   

এটা গেল একটা দিক। অপরদিকটা হল- কেন সবচেয়ে বেশী আসনে জয়লাভ করেও বিজেপি সরকার গঠন করার চেষ্টা করলো না? আবার কংগ্রেসই বা কেন আগাম সমর্থন দিয়ে আম আদমিকে সরকার গঠন করতে বাধ্য করলো?

এখানেই আছে রাজনীতির সেই পুড়নো প্যাঁচ আর হিসাব নিকাশঃ

১) বিজেপি যদিও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কিন্তু তারা সবচেয়ে বেশী আসনে জয়লাভ করেছিল, তারপরেও কেন তারা সরকার গঠনে চেষ্টা করলো না? – এটা এক কথায় অবিশ্বাস্য কারণ ভারতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অন্যদলের সাংসদ কেনাবেচা নিত্যনৈমিত্তিক একটা ব্যাপার, ডালভাত। বিজেপি এটা করেনি কয়েকটা কারণে-

ক) সামনেই জাতীয় তথা লোকসভার নির্বাচন, এই সময়ে সাংসদ কেনা-বেচার চেষ্টা করে নিজেদের গায়ে দুর্নীতির কালি লাগাতে চায়নি। যেখানে তারা নরেন্দ্র মোদীকে ক্লিন ইমেজের অধিকারী হিসেবে দাঁড় করিয়ে আগামী দিনের ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছে।

খ) আম আদমি পার্টির দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান এবং তাতে আম জনতার সমর্থন দেখে বিজেপি প্রমাদ গুনেছে। তাই তারা এবার আর এমুখো হয়নি।

গ)  “সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত আসন নেই”- বলে বিজেপি টেকনিক করে কেটে পরেছে। এক্ষেত্রে অবশ্য তারা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রাপ্ত আম আদমি পার্টিকে সরকার গঠনে চাপে ফেলে দুটি উদ্দেশ্য সিদ্ধি করতে চেয়েছে। আবার ‘সরকার গঠনে আম আদমির প্রতি কংগ্রেসের আগাম সমর্থন’- তাদেরকে এই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্যও করেছে। তারা একঢিলে অনেক পাখি মারতে চেয়েছে। তার নমুনা কিছুটা নিম্নরূপ:  
  • আম আদমি যদি সরকার গঠনে অপারগতা প্রকাশ করে ফেলে তাহলে বিজেপি সামনের জাতীয় নির্বাচনে বলবে, আম আদমি মুখে যাই বলুক না কেন কাজের বেলায় তারা ভীতু, ভোটে জিতেও সরকার গঠন করার মত সাহস রাখে না।  
  • বিজেপি ভেবেছে, সরকার গঠন করলেও তারা জনগণের কাছে যে সকল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়নে সমস্যায় পড়বে বা পারবে না। তখন তারা বলতে পারবে, দ্যাখো ওরা যা বলে তা করেনা বা করতে পারেও না। অর্থাৎ যত গর্জে তত বর্ষে না।      
২) অপরদিকে ভারতীয় কংগ্রেস প্রমাদ গুনেছে, যদি আম আদমি’র প্রতি মানুষের আকর্ষণ একই রকম থাকে, তাহলে সামনের জাতীয় নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি অবধারিত। কারণ ক্ষমতাসীন দলের প্রতি মানুষের সবসময়ই একটা নেগেটিভ আচরণ থাকে, যারা খুঁজে ফেরে ভোট দানে বিকল্প একটা দল কিন্তু সেই ভোট আবার তারা বিজেপিকে দিবে না। এখন এই ভোট গুলো যদি আম আদমি পার্টি পেয়ে যায় তাহলে ভোট তিন ভাগ হয়ে যাবে, ফলাফল বিজেপি চামে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়।  তাই কংগ্রেস চেয়েছে আম আদমি পার্টিকে বিতর্কিত করে তুলতে, যাতে করে তাদের ক্লিন ইমেজটাকে নষ্ট করা যায়। আর এই কারণেই তাদের এই আগাম নিঃস্বার্থ সমর্থন, যা কখনো দেখা যায় না।

তাহলে কি আম আদমি ব্যর্থ হবে বলে আপনি মনে করেন? রাজভাই পাল্টা প্রশ্ন জুড়ে দিলো?

আম বললাম, না! কারণ আপনি যদি জনাব কেজরিওয়ালের চেহারাটা ভাল করে দেখে থাকেন? তাহলে দেখবেন তার চেহারায় একটা নেতৃত্ব সুলভ ভাব ফুটে আছে। আমি বলবো, সে লিডার হওয়ার জন্যই জন্মেছে। তাই এইরকম একজন মানুষের পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব। আর মানুষ যদি দেখে জনাব কেজরিওয়াল তাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করছেন, তাহলে মানুষও তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করবে।  

তাই আমি মনে করি, তিনি যদি তার প্রতিশ্রুতির আংশিকও বাস্তবায়ন করতে পারেন তাহলেও দিল্লীর মানুষ তার প্রতি আস্থা রাখবেন আর তার ব্যর্থতা যাবে কংগ্রেস, বিজেপি আর আমলাতন্ত্রের ঘরে।   

রাজভাই, নায়ক ছবির মত উনিও জিততে যাচ্ছেন। অনিল কাপুর জিতেছিলেন সেলুলয়েডে আর কেজরিওয়াল জিতবেন বাস্তবে, যা আসলেই অনেক অনেক কঠিন।    
তাই বাজী রাখেন, জনাব অরবিন্দ কেজরিওয়াল হতে যাচ্ছেন, ভারতের আগামী দিনের সত্যিকারের নায়ক !!! 

৩০/১২/২০১৩

বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে


অবশেষে, আজ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩, মধ্যাহ্নে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচার পেল তার পরিবার।  রায়ে ৮ জনের ফাঁসী ও ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

আমি ভাবতেই পারিনি বিশ্বজিত হত্যাকাণ্ডের বিচার এই সরকার করবে বা করতে পারবে! যেদিন বিশ্বজিৎ খুন হয় সেদিন তার খুনের তথ্য দিয়ে একটা ব্লগ পোস্ট দিয়েছিলাম (বদলে যাও বদলে দাও ব্লগে সহ বিডি ব্লগে), তারপরে আরও একটা পোস্ট দিয়েছিলাম তার হত্যাকাণ্ডের বিচার তার পরিবার পাবে কিনা বা আমরা দেখে যেতে পারবো কিনা?
কিন্তু আজ একটা সন্তুষ্টির দিন এই যে মাত্র ১ বছর সময়কালের মধ্যে এই বিচার কাজটি সম্পূর্ণ হচ্ছে। এইজন্য আমি ব্যাক্তিগতভাবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নিচে পোষ্ট দুটোর লিঙ্ক দিলামঃ

বিচারহীনতার যে কালচার বাংলাদেশে এতদিন চলে আসছিল তা ক্রমশ দূর হচ্ছে। এটা দেখে ভাল লাগছে। আশাকরি এই দেশে অপরাধ করে আর কেউ পার পাবে না ভবিষ্যতে !!! 

বিঃদ্রঃ যখন বিশ্বজিৎ খুন হন তখন আমি ভাবতেই পারিনি যে বিশ্বজিতের সাথে আমার একটা পারিবারিক সম্পর্ক বের হবে! আসলে বিশ্বজিৎ ছিল আমার খুব কাছের পাড়াত এক বোনের দেবর। 

১৮/১২/২০১৩, দুপুর ১২.`৪০

শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাবা ও অনুভুতি

-   বন্ধু বলিল, ছেলের বাপ হলি- তোর অনুভূতি কি?
বলিলাম-
হ্যাঁ!
আগে একজন বাবা ডাকিত, এখন ডাকিবে দুইজনে-
আগে ছিলাম এক সন্তানের বাবা আর এখন দুইজনের
আগে ছিলাম কন্যা সন্তানের ভাগ্যবান পিতা, আর এখন পুত্র সন্তানেরও গর্বিত বাবা-
আগে ছিলাম বউ-মেয়েকে নিয়ে আদর্শ পরিবারের অভিভাবক
আর এখন বউ–মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে সুখী পারিবারের পথপ্রদর্শক-

-   -   বন্ধু বলিল, তাহলে তো বলতেই হয়- আছিস তুই বেশ ভাল?
বলিলাম-
হ্যাঁ!
আগে লাগিত একখানা খাট এখন লাগবে দুইখানা-
আগে চিন্তা ছিল শুধুই কন্যামুখি, এখন সেটার ভাগ হবে ছেলের জন্যও
আগে পূজোয় একজনের শপিং করলেই চলত, আর এখন করতে হবে দুই জনের-
আগে একজনের স্কুলের কথা ভাবলেই হত, এখন করতে হবে দুইজনের জন্য
আগে যে বাসায় থাকিতাম তা এখন আর চলবে না, লাগবে বড়
আগে মাসে যে খরচে সংসার চালাতাম, এখন তাতে আর চলিবে না!


১৩/১২/২০১৩, রাতঃ ১০-৩০

সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

ভোট, সুশীল আর আমজনতার জুতা

আচ্ছা, সামনেই তো ভোট? কাকে ভোট দিবেন সেটা কি ঠিক করেছেন? অথবা বিকল্প কিছু কি ভেবেছেন বা পেয়েছেন কাউকে, যাকে আপনি প্রাণ খুলে ভোট দিয়ে বাড়ীতে যেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন? পেশা, জীবিকা ঠিক রাখতে পারবেন? ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন? পারবেন নিজের মত প্রকাশ করতে স্বাধীনভাবে? চাইতে পারবেন বিচার অন্যায়ের? প্রতিকার পাবেন আপনার সমস্যার?  

ভারতে কিন্তু আমজনতার ঝাড়ু পার্টি দাঁড়িয়ে গেছে? আমাদের সুশীলরা কি এখনো দুই নেত্রীকে নিয়েই ত্যানা প্যাঁচাতে থাকবে? নাকি নিজেরা নিজেদের কোমর সোজা করে দাঁড়াবেন? কিন্তু আছে কি তাতে জোড় সোজা হয়ে দাঁড়াবার? নতুন কিছু করতে পারবেন তারা? ঝাড়ু না হোক এটলিস্ট “জুতা পার্টি” জাতীয় কোন কিছু? নাকি সম্বল মোর কম্বল খানির মত তারাও দিনের পর দিন দুই নেত্রীকে নিয়েই টক টক করতে থাকবেন?

যদি তারা সেটা করতে না পারেন বা কোমর সোজা করার ক্ষমতা না থাকে? তাহলে তাদের কোন অধিকারই নেই দুই নেত্রীর বিপক্ষে তথা রাজনীতি নিয়ে কথা বলার। তাদের কোন উপস্থিতি থাকা উচিত নয়- রেডিও, সংবাদপত্রে। টকশোর নামে টিভিতে বন্ধ হওয়া উচিত তাদের তেলতেলে সুখী চেহারা দেখানোর প্রতিযোগিতা। কারণ দুই নেত্রীর মত তাদেরও কথা শুনতে শুনতে আর চেহারা দেখতে দেখতে আমাদের কান, চোখ ব্যথা হয়ে গেছে।

তারচেয়ে কি এই ভাল না? সুশীলরা অফ যাক আর আমরা আমজনতা জুতা নিয়ে আগে বাড়ি ...


০৯/১২/২০১৩, রাতঃ ১০-১২

সুশীলঃ সব শিয়ালের এক রা, ‘হুক্কা’

যেখানে আমাদের ইনকাম ট্যাক্স অফিসাররা চাকুরীতে জয়েন করার পর থেকেই ধান্দায় থাকেন কিভাবে নিজের ইনকাম বাড়ানো যায়? সেখানে ভারতের এক ইনকাম ট্যাক্স অফিসার জনাব অরবিন্দ কেজরিওয়াল দেখিয়ে দিয়েছেন সৎ ইচ্ছা থাকলে দিল্লির মসনদও ধরা যায়!

জনাব আনা হাজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন যখন ভারতের আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে সারা পৃথিবীতে ঢেউ তুলেছেন, সারা ভারতের সুশীলরা যখন রাজনীতিকে গালাগালি করে দেশ মাটি পচিয়ে ফেলেছেন, ঠিক তখনই যুবক অরবিন্দ অনুভব করলেন রাজনীতিকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হলে তা করতে হবে রাজনীতি দিয়েই, ধানাই পানাই আর প্যান প্যানানি দিয়ে কোন লাভ হবে না। বড় জোড় কিছু মানুষকে নিয়ে মাঠে ময়দানে না খেয়ে কিছুদিন শুয়ে থাকা যাবে। তাতে করে রাজনীতিতে কোন পরিবর্তন তো আসবেই না বরঞ্চ রাজনীতিবিদদের হাসির খোরাক হওয়া যাবে।

“আম আদমি পার্টি” আর তার মার্কা “ঝাড়ু” নিয়ে জনাব অরবিন্দ যখন তার রাজনৈতিক দল খাড়া করতে শুরু করলেন, ঠিক তখনি জনাব আনা হাজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের সৈনিক সুশীলরা পিঠটান মারলেন। শুধু তাই নয়, এবার সুশীলরা তাদের সুশীল গিরি দেখানোর নতুন মওকা পেয়ে তাদের চরিত্র অনুযায়ী ‘ঝাড়ু’র বিপক্ষে অবস্থান নিলেন।

এথেকে কি বোঝা গেল?

বোঝা গেল এটাই, সুশীলরা কোনদিন নিজে যেটা বলেন সেটা তারা করেন না, করতে পারেন না, কারণ তাদের নিজ নিজ কথায় নিজেদেরই কোন আস্থা নেই। যার কারণে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকেন, এই বুঝি সবাই বুঝে গেল?

তবে একটা বিষয়ে কিন্তু এইসব সুযোগ সন্ধানী সুশীলদের মধ্যে দারুণ মিল, আর সেটা হল- সব শিয়ালের এক রা, ‘হুক্কা’।

যা আমরা হরহামেশাই দেখছি, সংবাদপত্র থেকে টিভির পর্দায় ...

০৯/১২/২০১৩, রাত, ৮-২০

রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

তক্ষক লোভী মানুষগুলোর সুমতি হোক!

তক্ষক! তক্ষক চাই! যে কোন দামে তক্ষক চাই! যেভাবেই হোক তক্ষক চাই! বাংলাদেশের কিছু মানুষ যেন তক্ষকের জন্য পাগল হয়ে গেছে। তাদের এটা চাইই! একটা পেলে তারা এটা কোটি কোটি টাকায় বিক্রি করবে! একদিনে বড়লোক হবে। রঙিন ফানুস ওড়াচ্ছে ওরা। কোথায় বিক্রি করবে, কার কাছে বিক্রি করবে সেই সম্পর্কে যদিও তাদের কোন ধারনাই নেই। তারপরেও তারা ছুটছে তো ছুটছেই। খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি থেকে মধুপুর হয়ে সুন্দরবন পর্যন্ত তারা ছুটছে। এখন তারা তাদের গন্তব্য ঠিক করেছে মনিপুর, মেঘালয়, আসামসহ ভারতের পাহাড়ি রাজ্য গুলোকে। সেখানেও এখন তক্ষকের ধোঁয়া! আর সেই ধোঁয়ায় হাওয়া দিচ্ছে আমাদের দেশের তক্ষকের নেশায় নেশাগ্রস্থ কিছু মানুষ! এদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। কাজ কাম বাদ দিয়ে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এরা এখন ভারত মুখী। আশা! যদি একটা পাই তাহলেই কোটিপতি!




শীতের সকালে গুয়াহাটির “ব্লু মুন হোটেল” এর রুমে বসে আমি আর নিজাম ভাই চা পানের সাথে সাথে দিনের কাজের পরিকল্পনা করছিলাম, এমন সময় রুমের দরজায় টোকা পড়লো, ইয়েস! বলেতেই হোটেল বয় দুই-তিনটা বিভিন্ন ভাষার পত্রিকা নিয়ে এসে সামনে রাখলো। তার মধ্যে থেকে দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকাটি রেখে বাকিগুলো ফেরত দিলাম।   

দৈনিক যুগশঙ্খ একটি বাংলা পত্রিকা, যেটা কিনা গত ৬৩ বছর ধরে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ভাবলাম আমাদের দেশে এত দিন ধরে নিয়মিত প্রকাশিত হওয়া পত্রিকা কয়টা আছে? মনে মনে গুনে খুব একটা অগ্রসর হতে পারলাম না। ইত্তেফাক বাদে আর কোন পত্রিকার নাম মনে করতে পারলাম না! 

আসামের তথা ভারতের খবর পড়ছিলাম আর পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছিলাম। হটাৎ তৃতীয় পাতায় প্রথম কলামে “চোরাশিকারির নিশানায় এবার গিরগিটি” খবরটায় চোখ আটকে গেল! খবরটা আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি- 

দৈনিক যুগশঙ্খ, গুয়াহাটি, বুধবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৩ সংখ্যার একটি প্রতিবেদন: “চোরাশিকারির নিশানায় এবার গিরগিটিঃ 

বাঘ, গণ্ডার, হাতির মত বড় মাপের জানোয়ার চোরা শিকারিদের নিশানায় আগে থেকেই ছিল। এবার গিরগিটি শিকারেও নেমে পড়েছে চোরাশিকারি বাহিনী। টোকায় গিকো (স্থানীয় নাম) নামে এক বিশেষ প্রজাতির টিকটিকির সন্ধানে চোরাশিকারিরা উত্তর-পূর্বের বনাঞ্চল কার্যত চষে বেড়াচ্ছে। জাপান, কোরিয়া সহ এশিয়ার বেশকিছু দেশে ওই টিকটিকির বাজার দর আকাশছোঁয়া। প্রাপ্ত বয়স্ক টোকায় গিকো প্রজাতির গিরগিটির চোরাবাজারে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকায় বিকোচ্ছে  বলে জানা গিয়েছে। ওই প্রজাতির পূর্ণ বয়স্ক গিরগিটির দৈর্ঘ্য ৪০ সেন্টিমিটার। এবং ওজন প্রায় ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। মূলত মণিপুরের জঙ্গলে টোকায় গিকো প্রজাতির গিরগিটি পাওয়া যায়। বিরল প্রজাতির ওই গিরগিটি মণিপুরের জঙ্গলে ঠিক ক’টি আছে সঠিক ভাবে তা জানা যায়নি। তবে গত ছয় মাসে পুলিশ এবং বন দফতরের যৌথ অভিযানে চোরাশিকারির কবল থেকে ৭০টি গিরগিটি উদ্ধার করা হয়। পিপল এনিম্যাল সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। জাপান, কোরিয়ার মতো দেশে স্থানীয় ভেষজ ঔষধ তৈরিতে ওই প্রজাতির গিরগিটি ব্যবহার করা হয়। যদিও পরিবেশবিদ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকটিকি দিয়ে ওষধ তৈরির কোনও বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। চোরাশিকারিদের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দারাও গিরগিটির সন্ধানে নেমে পড়েছেন। মণিপুরের থৌবাল জেলায় গিরগিটির বাচ্চা সংগ্রহ করে চোরাশিকারিরা লালনপালনের জন্য স্থানীয় কৃষকদের কাছে তুলে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পিপল ফর এনিম্যালের সংগঠক এর বিশ্বজিৎ। ওই গিরগিটি পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পরে প্রচুর টাকা দিয়ে চোরাশিকারিরা কিনে নিচ্ছে। চোরাশিকারিদের দাপটে টোকায় গিকো প্রজাতির গিরগিটি মণিপুর থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। ওই প্রজাতির গিরগিটিকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণী হিসেবে ঘোষণার জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন।


খবরটি পড়ে নিজাম ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, ঘটনা কি, এই তক্ষক মানে গিরগিটির খপ্পরে আপনারাও পড়েছেন? নিজাম ভাই বললেন, আর বলবেন না, কি যে এক হুলছুল ব্যাপার ঘটছে আমাদের করিমগঞ্জ সহ সমগ্র নর্থ-ইস্টে। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর মানুষ দলবেঁধে আসছে প্রতিদিন এর খোঁজে। মূলত আপনাদের দেশের মানুষের কারনেই এই হুজুগ এখন আকাশ ছোঁয়া। শুনি এর দাম নাকি কোটি কোটি টাকা, ছেলে-পেলে কাজ কাম, খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে শুধুই এর পিছনে ছুটছে।

আমি বললাম, এটা কি এখানে পাওয়া যায়? আর কাউকে পেতে দেখেছেন? আপনি কি চেনেন এটা? আমাদের ওখানে কিছু মানুষ তো প্রায় পাগল হয়ে গেছে, সাথে সাথে ফকির! আর আমি কাউকে এটা পেতে শুনিনি বা পেয়ে বড়লোক হতেও দেখেনি। 

নিজাম ভাই বললেন, ছোট বেলায় তো এটা আমরা অনেক দেখেছি, জঙ্গলে থাকে। এখন কেউ পেয়েছে কিনা তা আমি জানি না। তবে যারা এটা খুঁজছে তাদের আমি চিনি। আমার পাড়ার ছেলেরাই এইসব করছে। আমি বললাম, আমি ফেরার সময় ওদের একজনের সাথে কথা বলবো। এই বিষয়ে আমার জানার আগ্রহ আছে। নিজাম ভাই বললেন, আচ্ছা। 

ফেরার পথে নিজাম ভাইকে কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বললাম, কলা বেচা তো অনেক হল, এবার আমার রথ দেখার কাজটাও যে ষোলকলা পূর্ণ করতে হয়? আপনার পাড়ার ছেলেদের খবর দেন। আর এমনভাবে খবরটা দেন, যেন ওরা ধারনা করে- মক্কেল পাওয়া গেছে। দেখবেন ওরা হুড়মুড় করে আসবে। আমি এই লাইনের ট্যান্ডলদের চিনি। ওদের চরিত্র সম্পর্কে জানি। নিজাম ভাই ফোনে সঠিক ছেলেটি জোগাড় করার জন্য তার কোন ভাইকে নির্দেশ দিলেন।    

করিমগঞ্জে আসার পর, নিজাম ভাইয়ের সাথে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে একটু অপেক্ষা করার পর দুই তিনটা ছেলে এসে হাজির, নিজাম ভাই ওদের সবাইকে চেনে না। আমি নিজাম ভাইকে চোখের ইশারা করে ওদের নিয়ে খাওয়ার হোটেল “আহার”-এ ঢুকলাম। আমি আচার আচরণে, কথায় ওদের এমন একটা ধারনা দিলাম, যেন আমি একটা কেউকেটা! এবং ওদের সাথে কথা বলে এও বুঝলাম ওদের মধ্যে বাংলাদেশের কেউ আছে বা বাংলাদেশের সাথে ভাল যোগাযোগ আছে।

একটু কথা বলতেই ওদের জড়তা কেটে গেল। আর নিজাম ভাই যেহেতু ওই অঞ্চলের একজন নামকরা ব্যাক্তি, তাই ওদের ভিতরে আর কোন ভয়ও থাকলো না। একটু খোঁচা দিতেই অনর্গল কথা বের হতে থাকলো। যে ছেলেটার কথাবার্তায় সিলেটী টান বেশি আমি সেই ছেলেটিকেই টার্গেট করলাম। ওদের সাথে কথাগুলো হল এই ভাবে:

তক্ষক কি?

- এটা একটা বড় টিকটিকি। এটা গাছের গর্তে, মাটির কোটরে থাকে। এরা সোনালী, ছাই, মাটি ও পেস্ট এই ৪ রঙের হয়। গায়ে ছিট ছিট থাকে। চোখ হয় লাল। আর এরা মুখটা আকাশের দিকে তাক করে হাঁ করে থাকে।

আকাশের দিকে তাক করে হাঁ করে থাকে? 

- হ্যাঁ! কারণ এরা বিদ্যুৎ খায়। মানে ঝড়ের সময় যে বাজ পড়ে সেই বাজের বিদ্যুৎ খায়। 

আমি অবাক হয়ে ফের জিজ্ঞাসা করলাম, ধুর! এটা ঠিক না। তোমরা ভুল করছো, বিদ্যুৎ কি কখনো খাওয়া যায়? শুধু কি বিদ্যুৎই খায়, আর কিছু খায় না? 

- আমার এই প্রশ্নে ওদের মধ্যে আমাকে বুঝানোর আকাঙ্কা আরো বেড়ে গেল। বলল, এই বিদ্যুৎ খেয়েই তো ওদের পেটের মধ্যে মানে বুকের মধ্যে ম্যাগনেট তৈরি হয়। আর ওই ম্যাগনেটই হচ্ছে মেডিসিন। আর ওরা বাতাস, পোকা, টিকটিকি খায়। ছোট সাপও খায়। 

আমি বললাম কিসের মেডিসিন?

- অনেক দামি মেডিসিন তৈরি হয় এই ম্যাগনেট দিয়ে। ঠিক কিসের ঔষধ তৈরি তা আমরা জানি না। তবে জানি বিদেশীরা রিসার্চ করে দামি ঔষধ বানায়। 

এর দাম কত?

- একটু কাঁচুমাচু হয়ে বলল, এর দাম তো অনেক, কোটি কোটি টাকা। সাইজ ও বয়সের উপর এর দাম নির্ভর করে। ধরুন!

- এ গ্রেডঃ যদি ৩২০ গ্রাম হয়, তাহলে এর সাইজ হবে ১৯”-২০”, বয়স হবে ২৫০ বছর। এর বুকের মাপ হবে ৭”; যেখান থেকে ছিট ছিট রঙ শুরু হয়েছে। 

- বি গ্রেডঃ যদি ৩০০ গ্রাম হয়, তাহলে এর সাইজ হবে ১৮”-১৯”, বয়স হবে ১৫০-২০০ বছর।  

- সি গ্রেডঃ যদি ২৫০ গ্রাম হয়, তাহলে এর সাইজ হবে ১৬”-১৭”, বয়স হবে ১০০-১২০ বছর।

- ডি গ্রেডঃ যদি ২০০ গ্রাম হয়, তাহলে এর সাইজ হবে ১২”-১৫”, বয়স হবে ৮০-৯০ বছর।  

আমি বললাম এবার দাম বল?

- ওরা বলল, এ গ্রেডঃ ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা!

আমি বড় ধরণের শকট হয়ে পুনঃ জিজ্ঞাসা করলাম, কত?

- ওরা আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলল, দাম ঠিক আছে।

এবার আমার কাছে আর বিষয়টা মজার থাকলো না। আমি সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ছোট গুলো? 

- ওরা বলল, বি গ্রেডঃ ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা, সি গ্রেডঃ ৫০ লাখ টাকা আর ডি গ্রেডঃ ৪-৫ লাখ টাকা। 

আমি মনে মনে বললাম, যারা এই আকামটা করছে, তারা খুবই চালাক এবং নিষ্ঠুর সাইকো অপরাধী। এই সব ছোট ছোট ছেলেপেলে দিয়ে কি না করাচ্ছে? তারা এদের মাথায় টাকার এমন বিষ ঢুকিয়েছে যে, এরা সবগুলো শেষ পর্যন্ত সর্বস্বান্ত না হয়েই পারে না! 

এবার আমি জিজ্ঞাসা করলাম এর ক্রেতা কারা এবং লেনদেন হয় কিভাবে?

- লেনদেন হয় ক্যাশ টাকায় আর ব্যাংকের মাধ্যমে। আর কেনে হল বিদেশীরা। আমেরিকা, জার্মানি, চীন, থাইল্যান্ড এইসব দেশে যায়। বাংলাদেশে বিদেশীদের দালাল আছে আর এদের মাধ্যমে কেনে ঢাকা বারিধারার বড় বড় নামকরা বিল্ডিং গুলো! 

এ পর্যন্ত কয়টা বিক্রি করেছ? আর কত টাকা খরচ হয়েছে এক এক জনের?

- একটাও বিক্রি করিনি। তবে আমাদের এক এক জনের লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে এ পর্যন্ত।

আমি বললাম ভাল! তা তোমাদের কাছে কি এর কোন ছবি আছে? আমি দেখলে  হয়ত চিনতাম! বলেই, আমি নিজাম ভাইকে চালাকি করে বললাম, আচ্ছা মণিপুরে আপনার আদিবাসী যে এজেন্ট আছে ওকে বললে বোধ হয় দুই একটা পাওয়া যাবে! আমি ঢিল মারলাম। এতক্ষণ ওদের সাথে কথা বলে ওদেরকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। মনে মনে অপেক্ষা করলাম দেখি ওরা কি বলে। আমি পত্রিকা পড়ে ইতিমধ্যেই জেনে গেছি যে মনিপুরে এটা পাওয়া যাচ্ছে, আর এ খবর ওদের কাছে না থেকেই পারে না! 

- আমাদের কাছে এর একটা ভিডিও আছে, বলেই সিলেটী উচ্চারণের ছেলেটি তার পকেট থেকে মোবাইল বের করে ভিডিও অন করলো। আমি ও নিজাম ভাই তক্ষকের ভিডিওটি দেখে অবাক! আমাদের ধারণাতেই ছিল না, আসলেই যে তক্ষক নামে কিছু আছে, আর এটা এত বড় হয়! আমি অবাক হতে হতে এবং ওদের বোঝার আগেই ব্লু-টুথ অন করে ডাটা ট্রান্সফারের কর্মটা সেরে ওদের অনুমতি চাইলাম, এটা আমি নিতে পারবো কিনা? ততক্ষণে ভিডিও কপি হয়ে গেছে! আর সেই কপিই এই ব্লগে পেস্ট করেছি। হ্যাঁ! ওরা ভিডিওটার কপি দিতে শেষ পর্যন্ত না করেনি। তা যে কারণেই হোক!  

সবশেষে আমি বলতে চাই, এই সবই ধোঁকা আর মরীচিকা! আর এর পিছনেই কিছু মানুষ বুঝে, না বুঝে আর একদিনেই কোটিপতি হওয়ার লোভে ছুটছে! এতে ভাল হবে না, কারও ভাল হবে না! মধ্য থেকে একেবারে শান্ত নির্বিবাদী প্রাণীটির প্রাণ যাচ্ছে! ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ! 

তাই আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কায়মনে  প্রার্থনা করি, তক্ষক লোভী এই মানুষগুলোর সুমতি হোক! 

বিঃদ্রঃ পুরোনো লেখা, অন্য ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে। 

সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমাদের ভোট আমরা দেব, দেখে শুনে ভাগ করে দেব

বাংলাদেশে ভোটের মওসুম চলে এসেছে কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে হানাহানি আর কাড়াকাড়িতেই ব্যস্ত। আর এদের মধ্যে পড়ে আমরা আমজনতা মারা খেতে খেতে ও দৌড়ের উপর থাকতেই থাকতেই জেরবার।

আমি মনে করি, আমাদের এই দুর্ভাগ্যের জন্য আমরা জনগণও অনেকাংশে দায়ী। হুজুকে মেতে আমরা প্রতি নির্বাচনে এমনভাবে ভোট দেই যাতে করে ভোট গণনার পর দেখা যায় বিজয়ী জোট সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের অধিক আসন পেয়ে সরকার গঠন করছে, প্রকান্তরে যা তাদের নেতৃত্বকে বা সরকার প্রধানকে মহারাজা/রানীর ক্ষমতা এনে দিচ্ছে।

আমার তে, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের ভোট প্রদানে একটা নতুন ডাইমেনশন আনতে হবে। তা না হলে কোন কিছু দিয়েই আমরা আমাদের রাজনৈতিক অধিকারের সঠিক ব্যবহার করতে পারবো না। বারবার শুধুই রাজনৈতিক দলগুলির কাছে প্রতারিত হবো, আর ৫ বছর পর পর তাদের কাড়াকাড়িই দেখতে থাকবো। তাই আমি মনে করি, আমরা যদি নিম্নের অভ্যাসগুলি ত্যাগ করতে পারি তাহলেই শুধুমাত্র আমাদের রাজনৈতিক অধিকারের সুষ্ঠু ও সুন্দর ব্যবহার করতে পারবো আমরাঃ

১) আমাদের দলকানাগিরি ছাড়তে হবে

২) মার্কা দেখে কলাগাছকে ভোট দেওয়ার টেনডেন্সি পাল্টাতে হবে

৩) ধর্মের নামে মিষ্টি কথায় বা কুৎসায় নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়ার অভ্যাস মন থেকে নির্মূল করতে হবে

৪) টাকা খেয়ে ভোট দেওয়ার বদভ্যাস ত্যাগ করতে হবে

৫) যে জিতবে তাকে ভোট দিব বা ভোট নষ্ট করবো না- এই মনোভাব বদলাতে হবে

৬) মুরুব্বি যাকে ভোট দিতে বলবে তাকেই ভোট দেব- এই চেতনাকে মন থেকে মুছে ফেলতে হবে

৭) প্রার্থী ভাল কিন্তু জিততে পারবে না, তাই তাকে ভোট দিয়ে কি হবে?- এই চিন্তাও পাল্টাতে হবে।

৮) সাহসী, সমাজ দরদী, ভাল মানুষদের হার নিশ্চিত! তাই ভোটে দাঁড়িয়ে কি হবে?- এই ধরণের দুর্বল চিন্তাও ত্যাগ করতে হবে।

উপরের বিষয়গুলি যদি আমরা শতভাগ পালন করতে পারি তবেই আমরা এই দুই জোটীয় "ফাটা বাঁশ" থেকে মুক্তি পাব। নইলে নয়

হ্যাঁ! আমি জানি, এত কিছু পরিবর্তন করা এই বাংলায় সহজ কাজ নয়। তাই একটা সহজ ও শর্টকাট চিন্তা আমার মাথায় ঘুরছে ...

ধরুন! আমরা যদি আমাদের প্রত্যেক পরিবারের ভোট সমান দুইভাবে ভাগ করে দুই জোটকে দেই তাহলে ক্যামন হয়? কোন পরিবারে যদি বেজোড় ভোট থাকে তারা না হয় সেই বেজোড় ভোটটা তাদের পছন্দের জোটকেই দিলো?

আমার ধারনা এতে করে যে কাজটা হবে, সেটা হল কোন দল বা জোটই নিরঙ্কুশ সংসদীয় আসন পাবে না, যাতে করে তারা ইচ্ছামাফিক সংবিধান সংশোধন করার ক্ষমতা পায়। ফলশ্রুতিতে তারা স্বৈরাচারী মনোভাব ত্যাগ করতে বাধ্য হবে। এতে করে হয়ত কোয়ালিশন সরকারও গঠন করতে হতে পারে দলগুলোর মধ্যে।

তাই আসুন আমরা সবাই মিলে আওয়াজ তুলি, "আমাদের ভোট আমরা দেব, দেখে শুনে ভাগ করে দেব"।

অফটপিকঃ আসলে আমাদের হাতে বিকল্প তেমন কিছু নেই আর সেই আর সেই হতাশা থেকেই এই লেখা।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ !!!


০২/১২/২০১৩, রাতঃ ৯-৩০

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমাদের মন্দের ভাল বেছে নিতে হবে।


আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই কারণে ধন্যবাদ দেব যে, চক্ষু লজ্জা হোক বা লোক দেখানোর উপলক্ষ্যে হোক- উনি অন্তত আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষদের হাসপাতালে দেখতে গেছেন, কিছুটা সাহায্য সহযোগিতা করেছেনহোক না সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অল্পশুধু তাই নয় তিনি পুড়ে যাওয়া মানুষের ক্ষোভ, দুঃখের কথা শুনেছেন, শুনেছেন মানুষের কড়া কথা মুখের উপরে,শান্তভাবে

অন্যদিকে, আমাদের, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, সেই যে তার বিলাস বহুল বাড়ীতে বহাল তবীয়তে সুখে দিন গুজরান করছেন, তিনি তো একবারের জন্যও একটা পুড়ে যাওয়া মানুষের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন না বা দেখতে গেলেন না বা কাঁদলেন না প্রকাশ্যে- যেটা তিনি করেছিলেন তখন, যখন তার সন্তানদের ১/১১ তে সেনারা  অপরাধের অভিযোগে ধরে নিয়ে যায়তাকে কখনো মানুষের সমালোচনা শুনতে দেখি নাই প্রকাশ্যে, এমনকি সাংবাদিক সম্মেলনেও তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেনসাংবাদিকদের না করে দেওয়া হয়, যেন তারা কোন  প্রশ্ন না করেন

এখানেই শেখ হাসিনা আর বেগম খালেদা জিয়ার পার্থক্য
 
আমাদের মন্দের ভাল  বেছে নিতে হবে 

বিকল্প তো কিছু নেই আপাতত। 


02/12/2013