বাড়ির মালিকরা আজকাল কোন কিছুর ধার ধারছে না, মানছে না
কোন নিয়ম নীতি, হারিয়ে ফেলছে সব ধরণের বিবেচনা বোধ, মানবিকতা! কিছু বলতে গেলেই
ক্ষেপে যাচ্ছেন! ভাড়াটিয়াদের সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দ দেখার কোন ইচ্ছাই আর তাদের নেই!
আমরা যারা কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকি, যাদের বসবাসের জন্য
নিজস্ব কোন বাসস্থান নেই, তারা আছি মহাবিপদে! একদিকে আমাদের বেতনের সাথে যে হিসেবে
“হাউস রেন্ট” দেওয়া হয় বাস্তবে সেই হিসেবের মধ্যে বাসা ভাড়া পাওয়া একটা অলীক
স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে! ফলে বেসিক বেতনের একটা অংশ বাড়িভাড়া খাতে ব্যয় হচ্ছে। আবার
সেটা করতে যেয়ে খরচের অন্যখাতে টান পড়ছে। এই কথাটা আবার কর্মক্ষেত্রে বলেও কোন লাভ
হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান একটু ভাল হলে বড়জোর একটা সান্ত্বনা বানী শোনা যায় “নতুন পে-স্কেলে”
এটা বিবেচনা করা হবে! আর যদি প্রতিষ্ঠানটি একটু ঠোঁটকাটা টাইপের হয়, তাহলে তো কথায়
নেই, উত্তর আসে, “পোষালে থাকেন, না পোষালে চলে যান!”
আমি যাদের সাথে মিশি তাদের প্রায় সবাই ভাড়া বাসায় থাকেন।
যখন কোন আড্ডা বা অবসর সময়ে এই বিষয়ে কথা ওঠে, তখন বোঝা যায় বাড়ী মালিকদের চরিত্র
কত কিসিমের!
কোন বাড়ির মালিক হয়ত বাড়িভাড়া দেওয়ার সময় আপনাকে
প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, “আগামী এক বছরের মধ্যে ভাড়া বাড়ানো হবে না” কিন্তু বাস্তবে
দেখা যাচ্ছে তিন-চার মাস পরেরই আপনার কাছে ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ আসছে, “সামনের মাস
থেকে ভাড়া বাড়বে ২,০০০/- টাকা”। আপনি যদি বাড়ির মালিককে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের
কারণ জিজ্ঞাসা করেন, ধরে রাখুন উত্তর আসবে, “পোষালে থাকেন, না পোষালে চলে যান!”
আবার কোন বাড়ীওয়ালা হয়ত বাড়ী ভাড়া নেওয়ার সময় আপনার কাছে
১,০০,০০০/- টাকা অগ্রিম নিলেন এবং কথা দিলেন আগামী দুইবছর বাড়ী ভাড়া বাড়াবেন না!
আপনি লিখিত চুক্তি করতে চাইলেন কিন্তু উনি এড়িয়ে যেয়ে আপনাকে “তার” মানে
মুরুব্বীর কথায় বিশ্বাস রাখতে বললেন। বছর না ঘুরতেই আপনার কাছে যথারীতি নোটিশ
আসলো, “ভাড়া আগামী মাস থেকে ৩,০০০/- টাকা বাড়বে!” আপনি ক্ষেপে যেয়ে প্রতিবাদ করলেন
এবং এর প্রতিকার চাইলেন, নিশ্চিত থাকুন, সামনের মাসে উচ্ছেদের নোটিশ পাবেন!
নোটিশ পেয়েছেন? এবার আপনার ক্ষমা চাওয়ার পালা। কারণ
ইতিমধ্যে আপনি আপনার ছেলে-মেয়েকে পাশের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন এবং অফিসে বেশ
ব্যস্ত সময় কাটিয়ে রাতবিরেতে বাসায় ফিরছেন! আর এগুলোই আপনার জন্য “কাল” হয়েছে! কারণ
বাড়ি মালিকটি এটা খেয়াল করেছেন এবং আপনাকে মুরগী বানিয়েছে! আপনি উচ্ছেদ ঠেকানোর
জন্য নাকে খত দিয়ে হলেও, বেশী ভাড়া দিতে রাজী তো হবেনই উপরন্তু ফাও হিসেবে মাপও
চাইবেন!
কোন কোন বাড়ি মালিকের আছে ব্যাংক লোনের কিস্তি “প্রতিমাসের
৭ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতাকে” ভাড়াটিয়াদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার এক
অদ্ভুত মানসিকতা। আমি
এমন এক বাড়ি মালিককে জানি,
যিনি উপরে বর্ণিত অজুহাতটিকে কাজে লাগিয়ে ভাড়াটিয়াদের নিকট থেকে কোনরূপ পূর্বচুক্তি
বা নোটিশ ব্যতিরেকেই একমাসের ভাড়ার টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। পরবর্তীতে সেটা তিনি
বেমালুম ভুলে গিয়েছেন এবং কিছুদিন পর বাড়ির সব ভাড়াটিয়ার কাছে লিখিত নোটিশ
পাঠিয়েছেন, “প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বাসা ভাড়া পরিশোধ করা না হলে বাসায় “অটো
টু-লেট” টাঙ্গানো হবে”!
তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, “প্রতিমাসে আপনারা ভাড়া দিতে
দেরী করেন, এক একজন একেক সময় ভাড়া দেন। এতে করে আমার কিস্তি পরিশোধে সমস্যা হয়। প্রতিমাসে
টাকা ধার করতে হয়। যা আমার জন্য লজ্জাজনক!” এই কথা শুনে ভাড়াটিয়ারা একযোগে মিন মিন
করে বলার চেষ্টা করেছিল, “এটা কিভাবে সম্ভব, আমাদের বেতন তো হয় মাসের ৮-১০ তারিখে,
কারো কারো আরও পরে, আর এর জন্যই তো কিছুদিন আগে একমাসের ভাড়া অগ্রিম দিলাম!
ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না আঙ্কেল?” আর আঙ্কেলের ঠোঁটের আগায় আটকিয়ে থাকা উত্তরটা
ঝট করে বের হয়ে গেল, “তাহলে অন্য বাসা দেখেন!”
এবার আমার সাক্ষাত অভিজ্ঞতার কথা বলি, সেই ব্যাচেলর লাইফ
থেকে একই এলাকায় অনেকদিন থাকার কারণে বর্তমান বাড়ীর মালিক আমার পূর্ব পরিচিত। প্রায় সমবয়সী বাড়ী
মালিকটির ব্যবহারও চমৎকার, সেইসূত্রে বর্তমান ভাড়া বাসায় আমার ওঠা! প্রথম প্রথম সে
ভালই ছিল, প্রতিবছর ভাড়া বাড়াত, তবে সেটা সে আমাদের সাথে অলোচনা করেই করত। আমরাও
মানে ভাড়াটিয়ারা কখনো তাতে বাঁধা দিতাম না এবং স্ব স্ব অবস্থান থেকে তা মেনে
নিতাম। কিন্তু গত দুই-তিন বছর থেকে তার মধ্যে পরিবর্তন দেখছি, গায়ে আশপাশের ঝুনা-বাঁশ
রুপী প্রবীণ বাড়ী মালিকদের বাতাস লাগতে শুরু করেছে, ওনার ব্যবহার পাল্টাচ্ছে এবং
চক্ষুলজ্জা কমে যাচ্ছে! শুনতে পাই, প্রতি সপ্তাহের কোন একদিন এলাকার বাড়ী মালিকরা
একজোট হয়ে গলাকাটা রেটে ভাড়া বাড়ানোর ফন্দী আঁটে এবং সব বাড়ি মালিকদের সেটা বাধ্যতামূলক
ভাবে পালন করতে বলা হয়। অলরেডি ভাড়া বৃদ্ধির সেই গরম বাতাস আমাদের এলাকায় বইতে
শুরু করেছে এবং তা আমাদের গায়েও সেই আঁচ লাগছে।
আমার দেখা, এই ঢাকা শহরে ব্যাচেলরদের জন্য একটা ভাল বাসা
ভাড়া পাওয়া সবচেয়ে চেয়ে কঠিন কাজ। যদিও সব বাড়ীর মালিকই “মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য
ব্যাচেলর ছেলে খোঁজেন” কিন্তু বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে “ব্যাচেলর নট এলাউড!” কোন
কোন বাড়ীর মালিক যদিওবা দয়া পরবশতঃ ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দিতে রাজী হয় কিন্তু
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সেটা হয় অন্ধকার-দুর্গন্ধময় গ্রাউন্ড ফ্লোর আর না হয়
টিন-শেড টপ ফ্লোর! যা কিনা সচরাচর ফ্যামিলি ভাড়াটিয়ারা নিতে চায় না আর নিলেও তা
থেকে ভাড়া কম পাওয়া যায়। অপরদিকে সেই বাসাগুলোকেই ডবল টাকায় ভাড়া দিয়ে বাড়ির মালিক
ব্যাচেলরদের প্রতি “দয়া” দেখানোর পাশাপাশি আগাম সতর্কতা হিসেবে হুমকি দিয়ে রাখেন,
“একটু এদিক-ওদিক করলেই কিন্তু উচ্ছেদের নোটিশ পাবে বাবা’রা।
অনেকদিন ধরে ঢাকায় ব্যাচেলর/বিবাহিত দুভাবেই বাসা খুঁজে
এবং ভাড়া বাসায় থেকে বুঝেছি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষ বাড়ি মালিকরা ভাড়াটিয়াদের
উপর জুলুম করার উৎসাহটা পায় তাদের সুযোগ্যা গৃহিণীদের কাছ থেকে। এই গৃহিণীরাই হল যত
নাটের গুরুমা। আর এদের অত্যাচারটা শুরু হয় “জল” ছাড়া নিয়ে। সময়মত জলের মেশিন তো
এরা চালু করবেনই না, উল্টো জল ছাড়ার কথা বললেই ওনাদের মনকষ্ট শুরু হয়। যদিও এর
বিলটা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকেই নেওয়া হয়ে থাকে প্রতিমাসে। আবার কোন কোন বাড়ীর ছাদে দুটো
জলের ট্যাঙ্ক থাকে যারা থাকে পেটের মাঝ বরাবর পাইপ দিয়ে সংযুক্ত করা। ভাড়াটিয়াদের
বাসায় যে ট্যাঙ্ক থেকে জল আসে সেটা উপরে আর ওনাদের বাসায় যেটা থেকে জল যায় সেটা থাকে
একটু নীচে বসানো। আর কে না জানে- জল সবসময় তার টার্গেট মতই চলে, মানে নীচের দিকে
গড়ায়। ফলে মালিকের বাসায় জলের অভাব কখনোই হয় না। তাই ওনারা বোঝেন না বা বুঝতেও
চেষ্টা করেন না যে, একটা ফ্যামিলি বাসায় সঠিক সময়ে বা অনিশ্চিত সময়ের জন্য জল না
থাকলে কি ঘটে? আমি এমনও দেখেছি, “এলাকায় জলের সংকট দেখা দেওয়ায়, মালিকের বাসার
কাজের মেয়ে খুব ভোর ছাদে উঠে ভাড়াটিয়াদের জলের লাইনের মেইন “কি” বন্ধ করে দিয়ে
শুধুমাত্র নিজেদের লাইনে জলের প্রবাহটা ঠিক রাখছে!”
আর একটা কমন সমস্যা হলো বিদ্যুৎবিল। যদিও ভাড়া মিটানোর
সময় অধিকাংশ বাড়ির মালিকই তেলের মত স্বীকার করে - প্রতি মাসে “বিদ্যুৎ বিলের অরিজিনাল
কাগজ” দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা প্রায় ঘটেই না! আর কেউ যদি উপযাজক হয়ে চেয়েই ফেলে,
তাহলেই উত্তর আসে, আমাদের মিটার একটাই তাই ওটা দেওয়া সম্ভব না। আর এসব নিয়ে তাদের
ভাষায় বেশী কথা বলতে গেলেই উত্তর আসে, ‘বাসা ছাড়ুন’!
এসব দেখেশুনে আমার মনে হয়- আমরা যেন মানুষ না! গরু-ছাগল!
কথায় কথায় বাসা ছাড়ার হুমকি ধামকি দেওয়াটা আজকাল ঢাকার বাড়ি মালিকদের রেওয়াজে
পরিণত হয়েছে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, তবে কি আমরা আজ নিজদেশেই উদ্বাস্তু? যেসব রোহিঙ্গা
‘উদ্বাস্তু’ হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদেরও তো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়
সরাতে গেলে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিবাদ আসে এমনকি বিশ্বের মোড়লরা এসে হাজির হয়
কিন্তু আমরা যারা এদেশের বৈধ নাগরিক, সৎকর্মে নিয়োজিত থেকে প্রতিবছর সরকারকে ইনকাম
ট্যাক্স দিচ্ছি তাদের এই সমস্যাটা দেখার কেউই নেই! সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান এইসব
দেখার কথা, তারা যেন সব নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে! আর তারা ঘুমাবেই না কেন? ওদের
মধ্যে তো প্রায় সবাই আজ ঢাকায় বাড়ির মালিক হয়ে গেছে, আর সেটা না পারলেও মালিক
হওয়ার ধান্ধায় আছে! তাই ওদের ভাবখানা এমন, “শুধু শুধু স্ব-গোত্রীয়দের হয়রানি করবো
কেন”?
কিন্তু এমন হওয়ার কথা ছিল না? এই বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের
জন্য কঠোর আইন কানুন আছে কিন্তু সরকার ইচ্ছা করেই সেটার বাস্তবায়ন করছে না বা
পারছে না। আর সরকারের এই আইন প্রয়োগের অক্ষমতাই বাড়ি মালিকদের সাহস ক্রমাগত বাড়িয়ে
তুলছে, যা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর প্রভাব হবে ব্যাপক ও ভয়াবহ। ইতিমধ্যেই তা
দেখা যাচ্ছে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বল্প বেতনভুক্ত কর্মীরা ছাড়াও নিম্ন
ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলো আছে সবচেয়ে বিপদে! একদিকে যেমন তারা তাদের ইনকাম বাড়াতে
পারছে না, অপরদিকে পারছে না অতিরিক্ত বাড়িভাড়া দেওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যয়ের সাথে
তাল মিলাতে। যা তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ ও বেআইনি কাজ করার পাশাপাশি দুর্নীতি করতে
প্রলুব্ধ করছে।
অপরদিকে, আমার মতে- গার্মেন্টস শ্রমিকদের অসন্তোষের মূল
কারণই হলো প্রতিদিনের খরচের জন্য কিছু নগদ টাকা হাতে না থাকা আর বাড়ি মালিকদের
ক্রমাগত উচ্ছেদের হুমকি। এর সাথে যোগ হয়েছে তাদের “বাড়ি ভাড়া” ক্রমাগত ও অযৌক্তিক
হারে বৃদ্ধি পাওয়া। যার কারণে তারা আয়ের সাথে ব্যয় মিলাতে পারছে না। একজন
গার্মেন্টস শ্রমিক তার বাসস্থানের জন্য যে ভাড়া দেয়, তা যদি পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধাকে
বিবেচনায় নিয়ে প্রতি স্কয়ার ফিট হিসেবে তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে তা গুলশান–বনানী
এলাকার বাসা ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশী!
আমরা যারা এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তারা জানি- চাকুরী
বা কর্ম ঠিক রেখে বাসা পাল্টানো এবং তার খরচ বহন করা, অল্প সময়ে নতুন বাসা খুঁজে
বের করা, ছেলেমেয়েকে সুবিধাজনক স্কুলে ভর্তি করা, অফিসে/কাজে যাতায়াতের ব্যবস্থা
করা সহ- যে সকল ঝক্কি ঝামেলা একজন কর্মজীবী মানুষকে পোহাতে হয়, তা এককথায় স্বল্প
নোটিশে করা অসম্ভব! আর আমাদের এই অসুবিধাটাকেই বাড়ি মালিকরা নিয়েছেন তাদের সুবিধা
হিসেবে। আর এটা ব্যবহার করেই তারা ভাড়াটিয়াদের ব্ল্যাক মেইল করছে এবং ইচ্ছামত ভাড়া
বাড়াচ্ছে! ফলে তাদের এইসব যুক্তিহীন ও অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করতে গেলেই, যখন তখন
তারা ভাড়াটিয়াদের বাসা থেকে নেমে যেতে বলছেন- যা আসলে “ঘাড় ধরা”রই নামান্তর!
তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এবিষয়ে একটা কথাই বলা যায়, আর
তা হলো- আজকাল বাড়িভাড়া নিয়ে বাড়ি মালিকদের সাথে কথা বলাই পাপ! তাদের যা ইচ্ছা তাই
করবে কিন্তু কিছুই বলা যাবে না, সবকিছুই মেনে নিতে হবে?
আপডেটঃ ০৬/১১/২০১৩, রাতঃ ১০.১০