রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৫

উদ্ভট চিন্তা-৫; জনসংখ্যা ম্যাটার্স



আচ্ছা ধরুন! আপনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, বলুন তো দাদা, এই মুহূর্তে পৃথিবীর বড় বড় সমস্যাগুলো কি কি? হাতে গুনে গুনে দশটা বলুন তো দেখি?

নিশ্চিতভাবেই আমি উত্তরে বলবো-

১) জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে ব্যাপকভাবে। তাপ বাড়ছে; পৃথিবীর সঞ্চিত বরফ গলে যাচ্ছে, সাথে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতাও; তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের দেশ।

২) মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন বাড়ছে।

৩) পরিবেশের তথা প্রাকৃতিক ভারসাম্যে চরম সংকট দেখা যাচ্ছে। প্রাণ বৈচিত্র্য থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অনেক পশুপাখি, কীটপতঙ্গ এমনকি মৌমাছিও।

৪) পৃথিবীতে মানব সংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটছে। বনজঙ্গল কেটে, পরিবেশ ধ্বংস করে গড়ে উঠছে নতুন নতুন নগর, কল কারখানা ও কৃষিজমি।

৫) জঙ্গিবাদ ও মানুষে মানুষে অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে; বাড়ছে যুদ্ধবিগ্রহ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা।

৬) ধনী-গরীবের মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়ছে। মধ্যবিত্ত হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেট দাস। গ্রামের গৃহস্থ মানুষগুলো পরিণত হচ্ছে শহুরে উদ্বাস্তুতে। 

৭) কৃষিতে সেচ ও পানীয় জলের অভাব ক্রমশ প্রকট হচ্ছে।

৮) ব্যাপক নগরায়নের কারণে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে কৃষি জমি, দূষিত হচ্ছে নদ-নদী, ডোবা- নালা এমনকি সাগর-মহাসাগরও।

৯) ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগব্যাধি, বাড়ছে হাইব্রিড শস্যের উৎপাদন, বিলুপ্ত হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া শস্য, ফল ফলাদির গাছ ও উদ্ভিদ। 

১০) পৃথিবী ক্রমাগত মানুষের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। স্টিফেন হকিং এর ভাষায়, পৃথিবী বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। বড়জোর আর ২০০ বছর এটাতে বসবাস করা যাবে তারপর মানুষকে অন্য গ্রহে বাস করার ব্যবস্থা করতে হবে।

এখন আপনি আমাকে বলতে পারেন, এই যখন অবস্থা তাহলে এথেকে পরিত্রাণের উপায় কি? অথবা সমাধান কি?

উত্তরে আমি বলবো, এর সমাধান চিন্তা করে বের করার জন্য আমি খুবই ক্ষুদ্র মানুষ। তবে এটা বলতে পারি সমস্যার মূলে আছে বিশ্বব্যাপী মানুষের ব্যাপক ‘সংখ্যা’ বৃদ্ধি। জনসংখ্যা কোন কোন দেশে সামান্য কিছু কমলেও অন্যান্য দেশে মানুষের ব্যাপক জন্মহার তাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।

প্লিজ! কী উপায়? কী উপায়? বলবেন না! তারচেয়ে আসুন একটা উদ্ভট চিন্তা দিয়ে দিন শেষ করি-
ধরুন, জাতিসংঘ তার সদস্য দেশগুলোকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির মানদণ্ড হিসেবে “পরিবার প্রতি সর্বচ্চো দুই সন্তান”নীতি বাধ্যতামূলক করে দিলো এবং তা সবাইকে মানতে বাধ্য করলো! কোন দেশ এটা না মানলে তার জন্য জারি করা হলো নিষেধাজ্ঞা বা অর্থনৈতিক অবরোধ। বর্তমানে যেমন রাশিয়া ও ইরানের উপর জারী রয়েছে ভিন্ন ইস্যুতে- অনেকটা তেমনি বা আরও কঠোর কিছু!

ভাইরে, আমাদের এই পৃথিবীটাকে বুড়ো বানানোর দরকারটা কি? তারচেয়ে কি একটু পরিকল্পনা করে ‘যুবক পৃথিবীতেই’ বসবাস করারটা ভাল না? যারা অন্য গ্রহে যাবে তারা আগামীতে ‘যুবক পৃথিবীতে’ও তা পাড়বে; মধ্য থেকে আমরা বাকীরা তাতে ভাল থাকবো!

না হলে কিন্তু অল আর ইন হেল টুগেদার; এলাইভ! শুধুমাত্র অল্প কয়েকজন যাবে অন্য গ্রহে!

৯/০৭/২০১৫ দুপুরঃ ১.৩৯

বাসের ড্রাইভার-হেলপার ও আমাদের আচরণগত সমস্যা



একটা বিষয় সবসময় খেয়াল করি, আমরা যখনই বাসে উঠি তখনই আমরা আমাদের মুখের লাগাম খুলে ফেলি, খুলে ফেলি ভদ্রতার মুখোশ। এই যেমন ঢাকা শহরে আমাদের প্রাত্যহিক চলাচলে বাস একটা অপরিহার্য যানবাহন। আমরা মানি আর না মানি, এতে আমাদের সবাইকে কমবেশি উঠতে হয়; হাতেগোনা উচ্চবিত্তের কিছু মানুষ ছাড়া। উঠেই আমরা যে কাজটা করি- তা হলো নিজেদের যতরকম বিরক্তি আছে তা মনের এক জায়গায় পুঞ্জিভূত করে রাখি আর যখনই বাসের হেলপার বা কন্ডাক্টর ভাড়ার জন্য এসে দাঁড়ায় বা ড্রাইভার বাস চালাতে ঢিলেমি করে তখনই তা তাদের উপর ঝেড়ে ফেলি; শুরু করি অকথ্য গালাগাল। নিদেনপক্ষে একটা মুখ ঝামটা দেই-ই।

হ্যাঁ! আমি বলছি না যে এতে বাসের ড্রাইভার বা হেলপারের কোন দোষ থাকে না। তাদের অবশ্যই অনেক দোষ আছে, তারা সঠিকভাবে বাস চালায় না, সিটিং-এর নামে চিটিং করে, বেশী ভাড়া নেয়, রাস্তায় বাস তেছরা করে রেখে জ্যাম বাঁধায়, বাসে-বাসে গুঁতাগুঁতি করে কাঁচ ভাঙে; প্যাসেঞ্জারদের ভয় পাইয়ে দেয়। এছাড়াও এরা ইচ্ছাকৃতভাবে চলতি বাসটাকে সিগন্যালে ফেলে দিয়ে অতিরিক্ত প্যাসেঞ্জার তোলে; অফিস-বাসামুখি মানুষদের দেরী করিয়ে দেয়।

অবশ্য এর কোনটাই বিনা পানিশমেন্টে যায় না। বাসের ড্রাইভার থেকে কন্ডাক্টর-হেলপার সবাই অকথ্য গালি খায়; মাঝে মধ্যে খায় মাইরও। কিন্তু তারপরেরও এর কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্তু কেন?

আমরা কি জানি, বাসে কর্মরত এই মানুষগুলোকে যাদের আমরা ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, হেলপার হিসেবে ডাকি- তারা কত টাকা বেতন পায়? সারাদিনে কি খায়? বাস মালিকরা তাদের সাথে কি আচরণ করে? তাদের ডিউটি রোস্টার কি?

না, আমরা জানি না, জানার কোন চেষ্টাও করি না। কখনো কি ভেবেছি, এই মানুষগুলোরও মোটিভেশনের দরকার আছে, আছে তাদের নিয়মিত ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করার।

পরিবার পরিজন নিয়ে এই মানুষগুলো সুস্থ থাকলেই দেশের আরও অনেক মানুষ সুস্থ ও সুন্দর থাকবে; ভাল থাকবে সবকিছু। না হলে, সড়ক দুর্ঘটনা, রাস্তায় জ্যাম আর আমাদের গালাগাল চলতেই থাকবে। কিন্তু এগুলো আমাদের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবে না কখনোই! বরঞ্চ থাকতে হবে ক্ষতির অপেক্ষায়। 

অফটপিকঃ বাসে ওঠার সময় বাসের মালিকেরা তাদের ড্রাইভার-হেলপারদের বলে দেয়, “শোন! তোদের বাসে মাত্র দুইজন সুস্থ মানুষ থাকে আর তারা হলো তোরা দুইজন; বাকি সবাই পাগল”।

এই যদি হয় তাদের চলতি মোটিভেশন, তাহলে কি বোঝা যাচ্ছে বাকিটুকু?

১৯/০৭/২০১৫ সকালঃ ৯.০২